কে এম সবুজ
……………………………..
এটা কোন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তবুও হাজারো শিক্ষার্থী রাজপথে। নিজের অধিকার আদায়ের জন্য নেমেছেন তাঁরা। তাদের একটাই দাবি কোটা সংস্কার করা হোক। কোটা সংস্কারের দাবিতে তাঁরা শুধু ঢাকার শাহবাগ মোড়েই নয়, সারাদেশে আন্দোলন করছেন। কিন্তু তাদের আন্দোলনে পুলিশের হামলা কেন? রাবার বুলেটে চোখের ক্ষত শুধু সিদ্দিকের নয়, গোটা শিক্ষার্থীর চোখ আজ অন্ধকারে। যৌক্তিক আন্দোলন না করলে সরকার বাহাদুর দাবি মানছেন না, তাইতো রাজপথে নামতে বাধ্য হচ্ছে ওরা। দেশের বিশিষ্টজনরাও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সপক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন। সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা বরাদ্দ রয়েছে ৫৬ শতাংশ। মেধার তুলনায় বেশিরভাগ আসন কোটার বরাদ্দ থাকলেও পদ শূন্য থেকে যাচ্ছে। যেখানে মেধাবীরা সুযোগ পাচ্ছে না। এতে দেশের প্রকৃত মেধাবীরা চাকরির বাইরে থেকে যাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ের তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থানের অনেক পরিবর্তনও ঘটেছে, বদলেছে চাকরির বাজার, মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা। ফলে কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা আর কত বছর থাকবে? কোন কোন ক্ষেত্রে কোটা থাকা উচিত, কতটা থাকা উচিত? যাঁরা একেবারেই কোটা পছন্দ করেন না, তাঁরা বলে থাকেন, যেহেতু আমাদের সংবিধানে সব নাগরিকের অধিকার সমান, তাহলে আবার কারও কারও বিশেষ অধিকার কেন?
আমাদের দেশে বিসিএসে নিয়োগে বর্তমানে ৫৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাঁদের নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রয়েছে ১ শতাংশ, যা পূরণ করা হয় সাধারণত ওপরের যেকোনো একটি কোটা থেকে। অর্থাৎ কোনো কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেখান থেকে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ হয়।
এ হিসাব থেকে বোঝা যাচ্ছে, এ দেশে যে মেধাবী তরুণ, যিনি কোনো কোটায় পড়েন না (জেলা কোটা ছাড়া), তাঁর চাকরি পাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা কম। সংখ্যায় তাঁরাই বেশি আর তাঁদের লড়াইটাও বেশি। দিন-বছর শেষে তাঁদের বঞ্চনাও বেশি।
খুবই দুঃখজনক যে এ দেশে সাধারণ মেধা কোটা থেকে সংরক্ষিত কোটা বেশি এবং তা বছরের পর বছর চলছে। কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কোনো সরকারই সাহস দেখাচ্ছে না, পাছে অজনপ্রিয় হয়!
সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ৮ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জেলা কোটা পুনর্নির্ধারণ করে আদেশ জারি করে। নতুন আদেশে দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ঢাকা জেলার জন্য সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলার জন্য সবচেয়ে কম শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর কত দেরি হবে, এই কোটা সংস্কারে। সরকারের উচিৎ সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করাসহ শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি মেনে নেওয়া। এতে নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার সপক্ষের সরকারের পক্ষেই থাকবে। আর যদি শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়েন, লাঠিপেটা করে রক্তাক্ত করেন এতে নতুন প্রজন্মের জনসমর্থন হারানো ছাড়াই কিছুই হবে না। সময়ের দাবির সঙ্গে সরকারের সহমত থাকাটাও মনে করি গণতন্ত্রের অগ্রগতি। আর কোন শিক্ষার্থীর বুকে ঢুকবে না বুলেট। চোখ-মুখ রক্তাক্ত হবে না, এটাই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ।
কোটা সংস্কার নিয়ে শাহবাগে যা হয়ে গেল :
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অ্যাকশন ও দফায় দফায় সংঘর্ষে রবিবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। পুলিশের মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিপেটার জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুতর। আহত হয়েছেন ৫ পুলিশ সদস্যও। রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।
পত্রিকার খবরগুলোতে বলা হয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা ৭টার পরপরই শাহবাগে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের তুলে দিতে একযোগে লাটিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে পুলিশ। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। এ সময় পেছন থেকে ধাওয়া করে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কয়েকটি ভবনের গেটও ভেঙে ফেলেন আন্দোলনকারীরা। রাস্তায় প্রচুর ইনপাটকেল, লাঠিসোঠা ও টিয়ার শেলের খালি শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়কটি ছিল ক্ষতবিক্ষত। আমরা এ ধরণের ক্ষত আর দেখতে চাই না। কোটা সংস্কারের দাবি অবশ্যই যৌক্তিক। এটা সময়ের দাবি।
(মন্তব্য প্রতিবেদন)