Latest News
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ।। ৫ই চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Home / জাতীয় / কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিকোণে করোনা ভাইরাস এবং বাঁচার উপায়

কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিকোণে করোনা ভাইরাস এবং বাঁচার উপায়

মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী :
মানুষের কৃত পাপের দরুন জলে-স্থলে সর্বত্র বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান। যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। (সূরা রূম, আয়াত নং ৪১) রোগ-কিংবা মহামারি কিংবা দুর্যোগ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে আসে । বান্দাদের পরীক্ষা করতে বিভিন্ন সময় আল্লাহ তায়ালা এমন করে থাকেন। যেমন পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব ভয়-ভীতির মধ্যে নিপতিত করে , ক্ষুধা পিপাসায় কষ্ট দিয়ে, ধন-সম্পত্তি বিনষ্ট করে , জীবন নাশ করে , ফসল নষ্ট করে । হে নবী! আপনি সুসংবাদ জানিয়ে দিন ঐ সকল মুমিনদেরকে যারা বর্ণিত বিপদ সমূহে ধৈর্য্যধারণ করে। (সূরা বাকারাআয়াত নং- ১৫৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের বহু গুনাহ ক্ষমা করে দেন । (সূরা শূরা , আয়াত নং-৩০) সারা বিশ্বে আজ করোনা ভাইরাস মহামারি রূপ ধারণ করছে । চিন, ইতালি যুক্তরাষ্ট্র , ইরান , ভারত সহ আরব ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেকগুলো দেশের অসংখ্য নাগরিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়-লক্ষাধিক এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৪ সহস্রাধিক। ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত রুগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিচ্ছিন্নতা, জাতীয় বিচ্ছিন্নতা, আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতায় অচল হয়ে যাচ্ছে জন জীবন, দুর্ভিক্ষের অশনি সংকেত দিচ্ছে করোনা মহামারি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতি বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় দায়ভার অন্যের ঘাড়ে ফেলে না রেখে প্রত্যেককে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সংকটকালীন সময় উত্তরণের জন্য দায়িত্ববোধে এগিয়ে আসতে হবে। যথা:- ১। কৃচ্ছ্র সাধন করা, ২। যথাসম্ভব বিদেশী পণ্য বর্জন করা, ৩। পরনির্ভরশীলতা পরিহার করা ও ৪। দেশীয় পণ্যের ব্যবহার ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হওয়া । মহামারি কিংবা ভাইরাস নতুন কিছু নয় । বিভিন্ন শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী এমন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। রসূল স. এর সময়েও এমন মহামারি রোগ ছড়িয়েছিল। মানবতার মুক্তির দূত রসূল স. এর সমাধানও দিয়ে গেছেন । পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে সব কিছু আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতেই ঘটে । তবে সব কিছুর কারণ ও প্রতিকার বুঝতে আমরা সামর্থ রাখি না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে কৌশলী ও প্রজ্ঞাবান । মহানবী হযরত সায়্যেদিনা মুহাম্মাদ স. এরশাদ করেন। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের আর্বিভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব রোগ ব্যাধির উদ্ভব হয়। যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ) পবিত্র কুরআন ও রসূল স. এর ভবিষ্যৎ বাণীর হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, আমাদের কৃতকর্মের কারণে মহান আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন সময় শাস্তি স্বরূপ বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি ও বালা-মুছিবত দিয়ে থাকেন। যাতে করে আমরা সতর্ক হই । সুতরাং আমাদেরকে হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদের প্রতি খেয়াল রেখে সমস্ত পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মহান সৃষ্টিকর্তার মদদ চাইতে হবে। যাতে সমগ্র মানব জাতি এহেন বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। সাথে সাথে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দুআ সমূহ পাঠ করতে হবে এবং ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার উপায়গুলো অবলম্বন করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে করোনা থেকে বাঁচার উপায় :-আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি পবিত্র কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গুনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। ( সূরা- বনী ঈসরাইল আয়াত নং-৮২ ) বলুন, এটা বিশ্বাসীদের (ঈমানদার) জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিষেধক। ( সূরা হা-মীম আস-সাজদাহ, আয়াত নং -৪৪) বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারির সৃষ্টিকর্তা যেহেতু মহান আল্লাহ সুবহানাহু অ-তাআলা। সুতরাং এই মহামারি থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে প্রধানতঃ কুরআন সুন্নাহর শরণাপন্ন হতে হবে এবং রসূল স. এর বাতলানো পথ অবলম্বন করেই আমরা মুক্তি পেতে পারি । আসুন আমরা দশটি বিষয় মেনে চলি: ১। কথায় কাজে ঈমানের প্রতিফলন ঘটানোঃ আদর্শ ভিত্তিক ঐক্য এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ঈমানের প্রতিফলন ঘটালে আল্লাহ তাআলা তাকে দু:খ কষ্ট মুছিবত এবং দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন দান করে থাকেন, ২। বেশী বেশী দোয়া করা ঃ রসূল স. থেকে বর্ণিত দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর অন্তত; ১১ বার করে হলেও হাসবুনাল্লাহ , হাওকালাহ ও দোয়া ইউনুস পাঠ করতে থাকুন, ৩। আক্রান্ত এলাকায় গমন না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তি এলাকা ত্যাগ না করা ঃ রসূল স. ইরশাদ করেছেন,“যদি তোমরা মহামারির কোন সংবাদ শোন, তো সেখানে তোমারা প্রবেশ হতে বিরত থাক। আর যদি কোন শহরে বা নগরে কেউ আক্রান্ত হয় , তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ো না”। (বুখারী ) ৪। হতাশা ও অস্থির না হওয়া ঃ ভাইরাস নিয়ে হতাশা আর অস্থির না হওয়া । করোনা ভাইরাস নিয়ে হতাশা আর অস্থির হওয়া কোনো ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না , ৫। মানসিক শক্তিকে দৃঢ় রাখা ঃ অতিরিক্ত চিন্তা করে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল না হওয়া, ৬। তওবা করাঃ বেশি বেশি তওবা করা ও ইস্তেগফার পড়া। আল্লাহ মুখি হওয়া, তাকওয়া পরহেযগারী অর্জন করা দরকার, ৭। অযূকরাঃ ঘন ঘন অযূকরার মাধ্যমে শরীরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা। ডাক্তারগণের পরামর্শ হলো ঘন ঘন দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় নিয়ে ধৌত করা। রসূল স. দিনে কমপক্ষে পাঁচবার নামাযের পূর্বে অযরূ সময় দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করার কথা বলেছেন। এতে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় অতিবাহিত হয়, ৮। কালোজিরা ও মধুর ব্যবহারঃ দিনে ২/৩ বার কালোজিরা ও মধু খাওয়া । অসুখ হওয়ার পূর্ব হতেই সতর্কতা স্বরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রসূল স. ইরশাদ করেন- ‘কালোজিরা ও মধুসমস্ত দুরারোগ্য রোগের ঔষধ। ( সহীহ বুখারী ), ৯। হাঁচি কাশিতে সতর্ক থাকা ঃ হাঁচি/ কাশির সময় বাহু দিয়ে ঢেকে রাখা। রসূল স. যখন হাঁচি দিতেন তখন তার হাত অথবা কাপড় দ্বারা নাক ঢেকে রাখতেন (সুনানে আবু দাউদ) সুতরাং আমাদের উচিত হাঁচির সময় কাপড় অথবা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক ঢেকে রাখা, ১০। আল্লাহ তাআলার মদদ চাওয়া ঃ সর্বোপরি মহামারি থেকে মুক্তির জন্য বিনীতভাবে মহান আল্লাহর কাছে মদদ কামনা করতে হবে, তাহাজ্জদু পড়ে দুআ করতে হবে এবং ভাইরাসকে ভয় না পেয়ে ভাইরাসের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাআলাকে ভয় করবে ঈমানদার । অন্যান্য প্রতিষেধক সমূহ: ক। যে কোন ধরনের ভিড় বা জন-সমাগম এড়িয়ে চলা, খ। টাকা পয়সা গণনার পরে হাত পরিস্কার করা, গ। যেখানে সেখানে কফ, থুথু ফেলা বন্ধ করা, ঘ। অপ্রয়োজনে সিড়ির হাতল ধরে উঠা নামা না করা, ঙ। কথায় কথায় মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা, চ। খোলা-মেলা পরিবেশে থাকা, দরজা-জানালা সর্বক্ষণ বন্ধ না রাখা , ছ। খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে কচলিয়ে হাত ধৌত করবেন, জ। পর্যাপ্ত পানি পান করা, সবুজ শাক সবজি ও ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খাওয়া, ঞ। ভিটামিন সি, রসুন, টক দই, হলুদ, পেপে, ইত্যাদি খাওয়া এবং ট। খেজুর খাওয়া। রসূল স. আজওয়া খেজুর খেতে বলেছেন। সবশেষে বলব, আমরা করোনাকে ভয় করব না বরং সচেতন থাকব, ভয় করব করোনার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাআলাকে। ফরয ইবাদতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত করব ও আল্লাহ তাআলার নিকট বেশি বেশি ইস্তেগফার করব; তিনি যেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে করোনা ভাইরাস সহ অন্যান্য কঠিন ব্যাধি-মহামারি থেকে আমাদেরকে হেফাযত করেন। আমীন!

জনতার কণ্ঠ 24 সংবাদ

নলছিটিতে উদ্বোধন হলো কওমী মাদরাসা ও এতিমখানা

স্টাফ রিপোর্টার : ঝালকাঠির নলছিটিতে ইমাম সম্মেলনের মাধ্যমে উদ্বোধন হলো জামিয়া মোহাম্মাদিয়া জয়নাল আবেদন কওমী …