Latest News
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Home / জাতীয় / যন্ত্রের দাপট, তবু কদর হাতে ভাজা মুড়ির

যন্ত্রের দাপট, তবু কদর হাতে ভাজা মুড়ির

স্টাফ রিপোর্টার : রমজানে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে এখন দিন-রাত চলছে মুড়ি ভাজার উৎসব। প্রতিদিন এ গ্রামগুলো থেকে প্রায় এক শ মণ মুড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যায় এখানকার হাতে ভাজা মুড়ি। বছরে বিক্রি হয় প্রায় কোটি টাকার মুড়ি। রমজানের চাহিদা মেটাতে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও সমানতালে মুড়ি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এ পেশায় জড়িতদের পুঁজি না থাকায় তাদের ভাগ্য বদলায় না।

জানা যায়, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ২০০টি পরিবার যুগ যুগ ধরে মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সুস্বাদু-মিষ্টি মুড়ি হিসেবে সারা দেশে সমাদৃত এখানকার মুড়ি। সব পরিচয় ছাপিয়ে এই গ্রামগুলো এখন মুড়ির গ্রাম নামেই পরিচিতি পেয়েছে। নাখোচি জাতের ধান প্রকৃয়াজাত করে এ মুড়ির চাল তৈরি করা হয়। এখানকার মুড়িতে কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না, তাই স্বাস্থ্যসম্মত ও খেতে সুস্বাধু। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখান থকে মুড়ি নিয়ে যায়।

বর্তমানে প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি বিক্রি হয় ৬০ টাকা দরে। বাজারে ৮০-১০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায়। মুড়ির কারিগরদের নিজস্ব পুঁজি না থাকায় আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিতে বাধ্য হয়। রমজানের বাড়তি চাহিদা এবং কিছু বেশি আয়ের জন্য রাত ৪টা থেকেই শুরু হয় মুড়ি ভাজা, চলে দুপুর পর্যন্ত।

তবে মুড়ি ভাজায় জ্বালানি কাঠ ও আনুষঙ্গিক কিছু খরচ বাদে প্রতি ৫০ কেজি চালের মুড়ি তৈরি করে মজুরি পায় মাত্র চার শ টাকা। এই অর্থেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ। ঋণ নিয়ে মুড়ি ভেজে ঋণ পরিশোধ করতেই চলে যায় সব খরচ। একটি সুন্দর ঘর উত্তোলনেরও টাকা নেই তাদের।

মুড়ি ভাজার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকদের মধ্যে যারা একটু আর্থিক সচ্ছল তারা নিজেরা বাজার থেকে ধান কিনে আনে। তারপর বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরি করে মুড়ি ভেজে নিজেরাই বাজারজাত করে। আবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তারা আড়তদারদের কাছ থেকে বিনা মূল্যে চাল আনে। এই চাল দিয়ে মুড়ি ভেজে আড়তে সরবরাহ করে। এতে তাদের লাভ কম হয়।

তিমিরকাঠির ভূঁইয়া বাড়ির মুড়ির কারিগর নাছির উদ্দিন বলেন, রোজা শুরুর আগেই আমাদের মুড়ি ভাজার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। মেশিনে ভাজা চিকন মুড়ির চেয়ে আমাদের হাতে ভাজা মোটা মুড়ির চাহিদা বেশি। পাইকাররা যে পরিমাণের মুড়ি চায় আমরা তা দিতে পারি না।

একই গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমাদের টাকা নেই, এ জন্য অন্যের দেওয়া চাল দিয়ে মুড়ি ভাজি। সেখান থেকে প্রতি বস্তায় ৪০০ টাকা পাই, তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হতো তাহলে ভালো হতো।’

মুড়ির আড়তদার খান ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম খান শফিক বলেন, ‘আমাদের দপদপিয়ার হাতে ভাজা মুড়ি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু। তাই এ মুড়িতে খরচ একটু বেশি, দামও একটু বেশি পড়ে। সারা বছরই আমাদের এখানকার মুড়ির চাহিদা থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, সৌদি আরবসহ অনেক আরব দেশেই এ মুড়ি যায়। রোজা এলে চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ বছর সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করায় পাইকার ও শ্রমিকরা মহাখুশি।’

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, মুড়ি গ্রামগুলোকে বাণিজ্যিকীকরণ করে আরো অধিক উৎপাদন এবং এ পেশায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন বলে আমরা মনে করি। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরে বিষয়টি এনে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ঝালকাঠির ডিডিএলজি মো. দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর বলেন, এখানকার মুড়ি আমরা নিজেরাও কিনে স্বজনদের কাছে পাঠাই। হাতে ভাজা মুড়ি খেতে সুস্বাদু, মজাদার। এখানকার মুড়ি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুড়ি ভাজার কারিগরদের খোঁজখবর রাখা হয়।