Latest News
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ ।। ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Home / আন্তর্জাতিক / ফিলিস্তিনে পঙ্গু প্রজন্ম প্রকল্প ইসরাইলের

ফিলিস্তিনে পঙ্গু প্রজন্ম প্রকল্প ইসরাইলের

ডেস্ক রিপোর্ট : ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ মানেই হাসপাতালে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে পা হারানো বিক্ষোভকারীর চিৎকার-আর্তনাদ। কয়েক প্রজন্ম ধরেই এ চিত্র দেখে আসছে পুরো বিশ্ব। শুক্রবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি দিবস উপলক্ষে গত মাস থেকে শুরু হওয়া গাজা বিক্ষোভে ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন বুলেট ও বিষাক্ত গ্যাস অস্ত্র প্রয়োগ করছে ইসরাইলি বাহিনী। প্রাণহানিকর এসব অস্ত্র পৃথিবীর কোথাও আগে ব্যবহৃত হয়নি।

ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা মেডিসিনস সায়েন্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ইসরাইলি সেনাদের বুলেটে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন পাঁচ শতাধিক ফিলিস্তিনি। কাগজে-কলমে বা মুখে না বললেও ফিলিস্তিনে পঙ্গু প্রজন্ম তৈরির ঘৃণিত ইসরাইলি এ প্রকল্প বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার।

নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হামলা কৌশল দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৈনিক শিরোনামেও ইসরাইলের ‘নয়া যুদ্ধ কৌশলের’ এ চিত্রই উঠে আসছে।

গত ৬ এপ্রিল বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন ২২ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি তরুণ মোহাম্মদ আল-জায়েম। তিনি বেঁচে থাকবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকরা। কারণ তার পায়ের শিরা-উপশিরা, ধমনি ও হাড়ের বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। রামাল্লার ইসতিশহারি আরব হাসপাতালে ৭ দফা সার্জারির পর বেঁচে গেলেও আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। জায়েমের চাচাতো ভাই বলেন, ‘হাসপাতালের বিছানা থেকে সে উঠতে চেষ্টা করছিল। ভারসাম্য হারিয়ে হঠাৎই পড়ে গেল সে। তখনই সে বুঝতে পারল তার একটি অঙ্গ নেই। মিনিট পাঁচেক নীরব থাকার পর কথা বলল সে।’

গত ২৪ এপ্রিল ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে পা হারানো ১২ বছরের শিশু আবদেল রহমান নওফাল হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। হাঁটুর নিচের অংশে বুলেটের আঘাত লাগায় পুরো পা কেটে ফেলতে হয়েছে তার। বুলেট বিস্ফোরিত হয়ে পায়ের মাংস ছিড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। গত ১৮ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ আল-আজৌরির ক্র্যাচই এখন চলাচলের একমাত্র ভরসা। আঞ্চলিকপর্যায়ে সোনাজয়ী এ ম্যারাথন তারকার বিদেশে প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়ার স্বপ্ন এখানেই থমকে গেছে।

নিজ ভূমির অধিকার রক্ষার স্বাদ পেতে পঙ্গু এসব ফিলিস্তিনিও ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পিছু হটছে না। ২০০৮ সালে দুই পা হারানো ইব্রাহিম আবু তুরায়াহ গত বছরের ডিসেম্বরে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। হামাগুড়ি দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে আসা তুরায়াহ’র হাতে ছিল ফিলিস্তিনি পতাকা। মৃত্যুর মুহূর্তে তার শেষ অপরাজেয় বাণী, ‘আল কুদ্স (জেরুজালেম) আমাদের ভূখণ্ড, আমরা অবৈধ দখলদার ইসরাইলি রাষ্ট্রের কাছে কখনও মাথানত করব না।’

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দৈনিক মিডলইস্টআই লিখেছে, ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলন ঠেকাতে নতুন নতুন ভয়ানক অস্ত্র ও গ্যাস ব্যবহার করছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এবার তারা বাটারফ্লাই বুলেট নামক এক ধরনের বুলেট ব্যবহার করেছে। অন্য সাধারণ বুলেটের আঘাতে সামান্য ক্ষত তৈরি করে মাংস ভেদ করে বেরিয়ে গেলেও ইসরাইলি সেনাদের এসব বুলেট আরও ভয়ঙ্কর। বুলেটগুলো শরীরের কোথাও বিদ্ধ হলে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রক্তপাত হয়।

বুলেটটি শরীরের ভেতরে ঢুকেই শিরা, ধমনি ও হাড়গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে কোনো কারণে বুলেটবিদ্ধ রোগী বেঁচে গেলেও শরীরের যে স্থানে বুলেটটি লাগে সে স্থানটি কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কেদরা বলেন, ‘ইসরাইলের এ বুলেটগুলো শরীরের কোথাও ঢোকার সময় স্বাভাবিক ক্ষত তৈরি হলেও ভেতরে বিস্ফোরিত হয়ে মাংস ও টিস্যু ছিড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রাণঘাতী এ অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্ব আগে কখনও দেখেনি।’

শুধু বাটারফ্লাই বুলেট নয়, এবারের দমন অভিযানে ইসরাইলি বাহিনী হলুদ-সবুজ রঙের মিশ্রণের একটি অজ্ঞাত বিষাক্ত গ্যাসও প্রয়োগ করেছে। গ্যাসটি কারও শরীরের ভেতরে যাওয়ামাত্রই তার খিঁচুনি শুরু হয়, হাত-পা অসাড় হয়ে যায়, জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। প্রথমদিকে এই গ্যাসকে সাধারণ টিয়ারগ্যাস মনে হলেও পরবর্তী সময় দেখা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট ও মাইগ্রেনের ব্যথায় আক্রান্ত হয় এবং তার হার্টবিট অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

গাজার রসায়ন বিশেষজ্ঞ ড. আশরাফ জুমা বলেন, সাধারণ টিয়ারগ্যাসের চেয়ে ভয়ানক এটি। এ গ্যাস হামলার শিকার অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি তরুণ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আধুনিক এ গ্যাসকে ডাক্তাররাও শনাক্ত করতে পারেননি। ১৮৯৯ সালের হেগ কনভেনশন অনুযায়ী, শরীরের ভেতরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয় এমন ধরনের বুলেটগুলো ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হলেও বেআইনি এ কাজটি ইসরাইল বেপরোয়াভাবে করেই যাচ্ছে।  (সূত্র : যুগান্তর)